স্টাফ রিপোর্টার ::
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা খুন ও গুমের সঙ্গে জড়িত, অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের বিচার করতে হবে তবে এটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নয়। এটা এ জন্য যে, যারা খুন করে তাদের পরিণতি দেখে যেন অন্যরা শিক্ষা নেয়। মানবসমাজকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্যই এই বিচার করতেই হবে। শনিবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, রাজনীতিতে ধোঁকাবাজি ও মিথ্যাচার দেখতে দেখতে দেশের জনগণ এখন ক্লান্ত এবং বিরক্ত। কিছু রাজনীতিবিদ কথা বললে মনে হয় যেন এইমাত্র আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য ফেরেশতা পাঠিয়েছেন। ইলেকশনের আগে স্লোগান দেয় ওমুক নেতার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। আবার কেউ কেউ আরও একটু বাড়িয়ে বলে ওমুক নেতার চরিত্র ফুলের চেয়েও পবিত্র। ওরে বাপরে-বাপ! আর পবিত্র থাকে কয়দিন, ঐ কয়দিন ইলেকশনের রেজাল্ট পাওয়া পর্যন্ত। ভোট নেওয়ার পর আর জনগণের খবর রাখে না, কে মরলো কে বাঁচলো তারা কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। খবর রাখবে কেমনে, তারা ভোট নিয়ে ৫ বছর ঘুমায়। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারককে তো আপনারা কলাপাতায় ঘুমাতে দেখেছেন। তার বিছানার অভাব ছিল না। তার সৎ সাহসের, সততার, মানবতাবোধ, স্বচ্ছতার অভাব ছিল। সুবিচার দেয়ার অভাব থাকায় তাকে বনে-জঙ্গলে কলাপাতায় ঘুমাতে হয়েছে। অন্যদিকে সাড়ে ১৫ বছর জাতিকে দারুণভাবে দাপিয়েছেন একজন। মাঝে মধ্যে তিনি বিনা টিকেট ও ভিসায় আমাদের বিদেশে পাঠিয়ে দিতেন। আল্লাহ তার বিচার করেছেন। তারা আমাদের জন্য যা পছন্দ করেছিলেন, আল্লাহ তাদের জন্য তাই পছন্দ করেছেন। এখন তাদের অনেকে বিনা টিকেটে-বিনা ভিসায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বলেছি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কোনো প্রতিশোধ নিবো না। আমরা দেশকে ভালোবাসি বলেই ৫ আগস্ট আওয়াজ দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বলেছিলাম আমাদের অন্তরে অনেক ব্যথা, অনেক দুঃখ। আমাদের নেতৃবৃন্দকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সবগুলো অফিস বন্ধ করা হয়েছে, দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এরপর আমাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু এই কাজগুলো আপনারা করবেন না। আমরা জানি আপনারা দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মানুষকে ভালোবাসেন তাই সবাই শান্ত থাকুন, ধৈর্য ধরুন এবং দেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণ করুন। তিনি বলেন, যারা আমাদের সমালোচনা করে তারা আমাদের বন্ধু। কারণ তাদের সমালোচনার কারণে আমার অনেক কিছু শিখেছি। যত বেশি সমালোচনা করবেন তত বেশি ফুল দিবো। আমাদের কর্মীরা চাঁদাবাজি করছে না, মামলা বাণিজ্য করছে না। তারা জানে এগুলো হারাম। আমরা যারা রাজনীতি করি আমরা বিশ্বাস করি তারা সবাই দেশকে ভালোবাসে, আমি মনে করিনা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এসব অপকর্মে জড়িত হবেন। যদি কেউ ভুলক্রমে জড়িত হয়ে যান, প্লিজ বন্ধুগণ এতো জীবনের বিনিময়ে যারা আমাদের পরিবর্তনটা এনে দিলো, যেটাকে স্বাধীনতা বলা হলো, যার কারণে আপনি-আমি কথা বলতে পারছি, শান্তিতে ঘুমাতে পারছি, তাদের প্রতি একটু মেহেরবানি করেন। প্লিজ তাদের প্রতি সম্মান দেখান, শ্রদ্ধা দেখিয়ে আর কেউ চাঁদাবাজি করবেন না, আর কেউ দখলদারি করবেন না, আর কেউ মামলা বাণিজ্য করবেন না। কোনো অসহায় কিংবা নিরীহ একটা মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা আমার আপনার সবকিছু দেখছেন। ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, এ দেশে মেজরিটি-মাইনোরিটি বলে কিছু নেই। সবাই এদেশের গর্বিত নাগরিক। বাংলাদেশের সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। সব ধর্মের মানুষকে নিয়েই আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। অতএব যারাই এদেশের নাগরিক তাদের ধর্মীয় পরিচয় আলাদা থাকবে কিন্তু সে দেশের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একজন মর্যাদাবান নাগরিক। আমাদের সংবিধান আমাদেরকে সমান অধিকার দিয়েছে। ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জনগণ যদি আমাদের ক্ষমতায় বসায় তাহলে আমরা শিক্ষাকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিব। আমরা আমাদের ছাত্রদেরকে এমনভাবে তৈরি করব যাতে করে সার্টিফিকেট এবং কাজ দুইটাই তাদের হাতে একসাথে তুলে দিতে পারি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাঠ শেষ হলে সে একটা মর্যাদাবান সার্টিফিকেট পাবে এবং একটা কাজ তার জন্য তার হাতে তুলে দেওয়া হবে, এটাই দুনিয়ার ফল। আমরা সেই রকম একটি শিক্ষাব্যবস্থা যদি জাতীকে উপহার দিতে পারি আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সন্তানরা সফল হবে। তিনি বলেন, যে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে, তাদের আমরা সম্মানিত করতে চাই। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে কোন বৈষম্য থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না। এমন একটি রাষ্ট্র চাই-যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। দেশের যেসব মানুষের সামর্থ্য থাকবে না, তার স¤পূর্ণ দায়িত্ব নেবে এই রাষ্ট্র। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ চাই-যে বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেকটি মানুষকে শ্রদ্ধা করবে। এমন বাংলাদেশ যদি আপনারা চান-তাহলে দরকার আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ত্যাগ-তিথিক্ষা। জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খাঁনের সভাপতিত্বে এবং জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ ও জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য অ্যাড. রেজাউল করিমের যৌথ সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোখলেছুর রহমান, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাড. মো. শামস উদ্দিন, নায়েবে আমির মোমতাজুল হাসান আবেদ, সিলেট জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম আল মাদানি, জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. আব্দুল কুদ্দুস, জেলা জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট ইয়াসিন খান, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন শামীম, সুনামগঞ্জ পৌর জামায়াতের আমির আব্দুস সাত্তার মামুন, তাহিরপুর উপজেলা আমির অধ্যাপক রুকন উদ্দিন, দোয়ারাবাজার উপজেলা আমির ডা. হারুনুর রশীদ, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আমির মুফতি হারিছ উদ্দিন, ধর্মপাশা উপজেলা আমির বুরহান উদ্দিন, জুলাই বিপ্লবের শহীদ আয়াত উল্লাহর পিতা সিরাজুল ইসলাম, শহীদ সোহাগের পিতা আবুল কালাম, সিলেট মহানগর শিবির সভাপতি শাহীন আহমেদ, সুনামগঞ্জ জেলা শিবির সভাপতি মেহেদি হাসান, সিলেট জেলা পূর্ব শিবির সভাপতি মনিরুজ্জামান পিয়াস প্রমুখ। কর্মী সম্মেলনে সকাল থেকেই জেলার ১২ উপজেলাসহ প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে এসে সমবেত হন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
সুনামগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন
গুম-খুনের বিচার অগ্রাধিকার দিয়ে করতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান
- আপলোড সময় : ০২-০২-২০২৫ ১২:৪০:২১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০২-২০২৫ ১২:৪১:০০ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ